আন্তর্জাতিক, বিবিসিনউজ২৪ ডেস্ক: দিল্লি হাইকোর্ট দুই দশক আগে নৃশংস গুজরাট দাঙ্গা এবং ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জড়িত থাকার বিষয়ে বিতর্কিত বিবিসি ডকুমেন্টারি ‘ইন্ডিয়া- দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ নিয়ে দায়ের করা মানহানি মামলায় ব্রিটিশ-ভিত্তিক গ্লোবাল মিডিয়া এক্সিকিউটিভদের তলব করেছে।
সোমবার দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি শচীন দত্তের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ বিবিসির যুক্তরাজ্য সদর দফতর এবং বিবিসি ইন্ডিয়া অফিসের নির্বাহীদের কাছে এই আদেশ জারি করেছে।
‘জাস্টিস অন ট্রায়াল’ নামে একটি ভারতীয় অলাভজনক এনজিও কয়েক মাস আগে দিল্লি হাইকোর্টে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল, অভিযোগ করে যে বিবিসি ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ ডকুমেন্টারির মাধ্যমে বৈশ্বিক অঙ্গনে ভারতের মানহানি করার চেষ্টা করেছে। ওই রিটে বিবিসির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে সংগঠনটি।
বায়ুদূষণের প্রথমে দিল্লি, তৃতীয় অবস্থানে ঢাকা
আন্তর্জাতিক: ট্রেনের লাউডস্পিকারে হিটলারের বক্তৃতা, গ্রেফতার ২
সোমবার সেই রিটের ওপর শুনানি শেষে আদালত এ ব্যাপারে বিবিসির বক্তব্য জানতে চেয়ে এই তলবের আদেশ দেন। আগামী ১৫ সেপ্টের মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে দিয়েছেন বিচারক। যদি সেদিন বিবিসির দুই শাখার প্রতিনিধিরা হাই কোর্টে হাজির না থাকেন, সেক্ষেত্রে আদালত অবমাননার অভিযোগে পড়বে বিবিসি।
দিল্লি হাই কোর্টের জেষ্ঠ্য আইনজীবী অ্যাডভোকেট হরিশ সালভে আদালতে রিটকারী ওই এনজিওর প্রতিনিধিত্ব করছেন। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, দুই খণ্ডের ওই তথ্যচিত্রের মাধ্যমে বিবিসি কেবল ভারতের রাজনীতিই নয়, বিচারব্যবস্থার মানহানি করেছে।
গত ১৭ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে বিবিসি ২ টেলিভিশন চ্যানেল। মূল বিবিসিরই একটি শাখা এই চ্যানেলটি।
তথ্যচিত্রটিতে প্রধানত দেখানো হয়েছে, কীভাবে ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গাকে ব্যবহার করে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন। এমন অনেক কথাই অবশ্য ছবিটিতে বলা হয়েছে, যা নতুন নয়; কিন্তু যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এক জায়গায় এনে বিবিসি একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছে। আর তত্ত্বটি হলো, গুজরাট দাঙ্গা মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছে।
এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং হিন্দুত্ববাদী নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ভারতের বিচারব্যবস্থা তাঁকে সাহায্য করেছে, তা ও দেখানো হয়েছে ছবিতে।
এদিকে, দুই খণ্ডের সেই তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয় ভারতের রাজনীতিতে। চিত্রটির প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি ও বিজেপিবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তার জেরে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তথ্যচিত্রটি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
বায়ুদূষণের প্রথমে দিল্লি, তৃতীয় অবস্থানে ঢাকা
আন্তর্জাতিক: ট্রেনের লাউডস্পিকারে হিটলারের বক্তৃতা, গ্রেফতার ২
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারত ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্মানহানির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বানানো হয়েছে এ তথ্যচিত্র।
তার কিছুদিন পর ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে বিবিসি ভারত শাখার দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে হানা দেন ভারতের আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা। তিন দিন ধরে চলা সেই তল্লাশি অভিযান শেষে দুই কার্যালয়ের আর্থিক লেনদেন ও ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত যাবতীয় নথি তারা জব্দ করে নিয়ে যান।
আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, দুই কার্যালয়ে তারা সমীক্ষা চালিয়েছেন, তল্লাশি নয় এবং পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা শেষে যাবতীয় নথি ও কাগজপত্র তারা ফেরত দেবেন।
সেই অভিযানের প্রায় দু’মাস পর, ১৩ এপ্রিল ভারত শাখার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলা করে ভারতের আয়কর বিভাগ। সেই মামলার বিচার কার্যক্রম এখনও চলছে।