Wednesday, May 8, 2024
No menu items!
HomeUpdate Newsআম খেলে কি লাভ হয়?

আম খেলে কি লাভ হয়?

বিবিসিনিউজ২৪ ডেস্ক: আম আমাদের প্রিয় ফলগুলোর মধ্যে একটি। আমাদের আশেপাশে এমন মানুষ কমই আছে যারা আম খেতে পছন্দ করেন না। আম উপমহাদেশের সবচেয়ে সুস্বাদু ফল। সাধারণত এর রং কাঁচা হলে সবুজ, পাকলে হলুদ এবং কখনো লাল হয়। বাংলাদেশ ও আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে চাষ করা আমের বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা।

চলছে আমের মৌসুম। স্বাদ ও গন্ধে ভরপুর এই পাকা আম সবার পছন্দের তালিকায় রয়েছে। আম শুধু স্বাদেই নয়, দেখতেও নানাভাবে খাওয়া যায়। রস থেকে আচার পর্যন্ত খাওয়া যেতে পারে। এটি বিভিন্ন উপায়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। স্বাদ ও গন্ধ ছাড়াও আম পুষ্টিগুণে ভরপুর। পাকা আম ভিটামিন এ সমৃদ্ধ।

এটি শরীরের উপকার করে যেমন; চোখের রোগ, চুল পড়া, রুক্ষ ত্বক, হজমের সমস্যা দূর করে। আম ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং এতে ফাইবার থাকে যা সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, বিশেষ করে রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরল যেমন কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন। পাকা আম ত্বকের যত্নেও উপকারী ভূমিকা পালন করে।

আম কাঁচা হোক বা পাকা হোক আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাঁচা আমের গুণাগুণ পাকা আমের চেয়েও বেশি। কাঁচা হোক বা পাকা, আম আমাদের শরীরকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

আমের পুষ্টিগুণঃ

আমে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ এবং ভিটামিন উপাদান যেমন- ভিটামিন-এ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি৬ রয়েছে। তাছাড়া আরও কিছু পুষ্টি উপাদান পটাসিয়াম, কপার লৌহ এবং এমাইনো এ্যাসিড রয়েছে। এছাড়াও আমে বায়োলজিকাল উপাদান, প্রো ভিতামিন এ বেটা ক্যারোটিন, লুশিয়েন জিলাইক এ্যাসিড, আলফা ক্যারোটিন, পলি পিথানল কিউরেচিন কাম্ফারল, ক্যফিক এ্যাসিডসহ আরও অনেক বিশেষ উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থের জন্য অত্যান্ত উপকারী।

আমের প্রজাতিঃ

পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির মত আম আছে। আমের বিভিন্ন জাত আছে, যেমন- ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, গোপালভোগ, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, কালীভোগ, কাচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা ইত্যাদি। আমাদের দেশে আম গাছকে জাতীয় গাছের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

আমের স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ

১) পাকা আম আমাদের ত্বককে সুন্দর, উজ্জ্বল ও মসৃণ করে। শুধু তাই নয়, এটি আমাদের ত্বককে ভেতর ও বাইরে থেকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। আম আমাদের ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং ব্রণের সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

2) আমেও পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ লবণ থাকে। আমের খনিজ লবণ আমাদের শরীরে দাঁত, নখ, চুল ইত্যাদি মজবুত করতে উপকারী ভূমিকা পালন করে।

3) সাধারণত, পাকা আম ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, এইভাবে মুখ এবং নাকের কালো দাগ দূর করতে অনেকাংশে সাহায্য করে। আপনি যদি প্রতিদিন 100 গ্রাম পাকা আম খান তাহলে আপনার কালো দাগ চলে যাবে।

৪) পাকা আম ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, তাই এগুলো হজমে সাহায্য করে। আমে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম রয়েছে যা আমাদের শরীরের প্রোটিন অণুগুলিকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে, যা হজমের উন্নতিতে সহায়ক।

5) আমে প্রায় 25 টি বিভিন্ন ধরণের কেরাটিনয়েড রয়েছে, উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সুস্থ এবং শক্তিশালী রাখে।

৬) আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স থাকে। এই ভিটামিন আমাদের শরীরের স্নায়ুতে অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরকে রাখে সম্পূর্ণ সতেজ। ফলে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে।

৭) আমে রয়েছে বেটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়ামের পরিমান পর্যাপ্ত থাকায় হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।আমাদের হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮) আপনি যদি প্রতিদিন এককাপ আম খেতে পারেন তাহলে এটি আপনার শরীরে ভিটামিন ‘এ’ এর চাহিদার প্রায় পঁচিশ শতাংশের যোগান দিতে পারবে। ভিটামিন ‘এ’ আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারী। এটি আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে।

৯) আমে প্রচুর পরিমাণে এসিড থাকে যেমন- টারটারিক এ্যাসিড, ম্যালিক এ্যাসিড ও সাইট্রিক এ্যাসিড যা আমাদের শরীরে অ্যালকালাই বা খার ধরে রাখতে সহায়তা করে অনেকাংশেই।

১০) আমের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। স্তন, লিউকেমিয়া, কোলন প্রোস্টেট ক্যান্সারের মত মারাত্মক ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে প্রয়োজনীয় এনজাইমও পাওয়া যায়।

১১) পাকা আম পটাশিয়ামসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আমদের হার্টবিট ও রক্তস্বল্পতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আমাদের হার্টবিটকে সচল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

১২) পাকা আম আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কারে সহায়তা করে। আমের মধ্যে থাকা টারটারিক, ম্যালিক ও সাইট্রিক এ্যাসিড শরীরে অ্যালকোহল ধরে রাখতে সহায়তা করে।

১৩) আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমে ভিটামিন-সি এর পরিমাণ বেশি। যা আমাদের দাঁত ও হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

১৪) আম আমাদের শরীরের ক্ষয়রোধ করে। প্রতিদিন আম খেলে দেহের ক্ষয়রোধ হয় এবং স্থূলতা কমিয়ে শারীরিক গঠনে ইতি বাচক ভূমিকা পালন করে ।

১৫) শুধু তাই নয়, আমের ভেষজ গুণ আমাদের স্কিন ক্যান্সারসহ ভিভিন্ন জটিল রোগ থেকে রক্ষা করে।

সতর্কতাঃ

পাকা আম খাওয়া ভালো তবে খুব বেশি খাওয়া ঠিক নয়। পাকা আমে চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে যাদের ডায়াবেটিস আছে অথবা হবার সম্ভাবনা আছে তাদের জন্য আম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। মাঝারি মাপের একটি পাকা আমে ৩ গ্রাম ফাইবার থাকে। তাই কেউ যদি পরপর বেশ কয়েকটি আম খেয়ে ফেলেন তবে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আমের নিম্নলিখিত স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।

গর্ভাবস্থায় আমের উপকারিতা- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আম খাওয়া উপকারী। আমে কিছু ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে যা মা ও শিশুকে শক্তি জোগায়। গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

ত্বকের জন্য- আমকে খুব ভালো ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গরমে আমের জুস খেলে ত্বক সুস্থ থাকে। সূর্যের আলো থেকে ত্বককে রক্ষা করে। আম পুষ্টিগুণে ভরপুর।

বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে- ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে চাইলে প্রতিদিন একটি করে আম খান। আম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। যা মস্তিষ্কে পুষ্টি জোগায়। মস্তিষ্ক পুষ্টি পায় না। তাই নানা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মাথার যত্ন নিন।

চোখের জন্য- চোখ আমাদের শরীরে খুবই নাজুক। চোখের যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চোখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আমের রস খেতে হবে। তাজা আম রান্না করলে প্রচুর ভিটামিন থাকে। যা শরীরকে শক্তিশালী করে। চোখের সংশোধন করলে গ্লুকোমা এবং গ্লুকোমার মতো সমস্যা হয় না। আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা চোখের জন্য উপকারী।

হাঁপানি – যা পরিবেশে ধোঁয়া ও দূষণের কারণে ছড়ায়। হাঁপানি রোগীদের জন্য প্রতিদিন একটি আম খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আমের জুসও খাওয়া যেতে পারে। শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি অ্যাজমার প্রভাব কমায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাঁপানিও সেরে যায়। হাঁপানি রোগীদের আম খাওয়া উচিত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে – শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে আম খাওয়া উচিত। আম আয়রন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। শরীরকে শক্তিশালী করে। একটি সুস্থ ইমিউন সিস্টেম শীতের শুরুতে জ্বর সৃষ্টি করে না।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Trending Post